
২৬ এপ্রিল ইরানের হরমুজগান প্রদেশের শহীদ রাজাই বন্দরে বিস্ফোরণের পর ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে হাঁটার সময় মানুষজন তাদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন। ছবি: এএফপি
ইরানের দক্ষিণাঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দরে শনিবার একটি ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়েছে। এতে অন্তত চারজন ও পাঁচ শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে। যদিও বিস্ফোরণের কারণ তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট হয়নি।
দক্ষিণ হরমুজগান প্রদেশে অবস্থিত শহীদ রাজাই বন্দরের বিষয়ে জরুরি সেবা বিভাগের উদ্ধৃতি দিয়ে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, এই ঘটনায় ৫১৬ জন আহত হয়েছে এবং শত শত মানুষকে আশপাশের চিকিৎসাকেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়েছে। এটি হরমুজগান প্রদেশের দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত ইরানের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক বন্দর।
এ ছাড়া রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির রিলিফ অ্যান্ড রেসকিউ অর্গানাইজেশনের প্রধান বাবাক মাহমুদি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে, উদ্ধারকর্মীরা অন্তত চারজনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে।’
ওই অঞ্চলের বন্দর কর্মকর্তা এসমাইল মালেকিজাদেহর উদ্ধৃতি দিয়ে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বলেছে, ‘শহীদ রাজাই বন্দরের একটি অংশে বিস্ফোরণ ঘটেছে এবং আমরা সেখানে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
রাজধানী তেহরান থেকে এক হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দক্ষিণে অবস্থিত শহীদ রাজাই বন্দরকে ইরানের সবচেয়ে আধুনিক কনটেইনার বন্দর হিসেবে বর্ণনা করেছে সরকারি বার্তা সংস্থা ইরনা। এই বন্দর হরমুজগান প্রদেশের রাজধানী বন্দর আব্বাস থেকে ২৩ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং হরমুজ প্রণালির উত্তরে অবস্থিত, যেখান দিয়ে বিশ্বের এক-পঞ্চমাংশ তেলের সরবরাহ হয়।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত ফুটেজে বন্দর এলাকার ওপর ঘন কালো ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে, যেখানে প্রচুর কনটেইনার রাখা রয়েছে। জরুরি সেবা বিভাগ দ্রুত প্রতিক্রিয়া দল পাঠিয়েছে বন্দরে।
এদিকে ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ রেজা আরেফ বিস্ফোরণের কারণ নির্ধারণ এবং ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা মূল্যায়নের জন্য তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা ইসনা।
হরমুজগান প্রদেশের সংকট ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রধান মেহরদাদ হাসানজাদেহ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেন, ‘এই ঘটনার কারণ হলো শহীদ রাজাই বন্দরের জেটি এলাকায় সংরক্ষিত কয়েকটি কনটেইনারের বিস্ফোরণ। আমরা বর্তমানে আহতদের আশপাশের চিকিৎসাকেন্দ্রে স্থানান্তর করছি।’
বার্তা সংস্থা ফারস জানিয়েছে, বিস্ফোরণের শক্তি এতটাই প্রবল ছিল যে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূর থেকেও তা অনুভূত ও শ্রুত হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছে, বন্দরের এত দূর থেকেও মাটিতে কম্পন অনুভূত হয়েছে।
এ ছাড়া বার্তা সংস্থা তাসনিম বলেছে, ‘আঘাতের তীব্রতায় বন্দরের বেশির ভাগ ভবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ন্যাশনাল ইরানিয়ান অয়েল প্রডাক্টস ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘শহীদ রাজাই বন্দরে বিস্ফোরণের সঙ্গে রিফাইনারি, জ্বালানি ট্যাংক, বিতরণ কমপ্লেক্স বা তেল পাইপলাইনের কোনো সংযোগ নেই। বন্দর আব্বাসের তেল স্থাপনাগুলো বর্তমানে কোনো বিঘ্ন ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে।’
বিরল এই বিস্ফোরণ ঘটল ইরানে কয়েক মাস আগে ঘটে যাওয়া এক ভয়াবহ শ্রমিক দুর্ঘটনার পর। গত সেপ্টেম্বর মাসে পূর্ব ইরানের তাবাসে গ্যাস লিক থেকে সংঘটিত কয়লা খনির বিস্ফোরণে ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। দেশটির কর্তৃপক্ষ ওই সময় জাতীয় শোক ঘোষণা করেছিল।