০৪:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

তিনটি ফিলিস্তিনি কবিতা

  • আপডেট সময়: ০৮:৩২:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫
  • 11

তোমাদের শিল্পের কচকচানি থামাও, আমার লোকেরা মারা যাচ্ছে

উপনিবেশবাদীরা ফুল নিয়ে লেখেন

আমি শিশুদের কথা বলি, শোনো—

তারা ঘাসফুলে পরিণত হওয়ার আগের সেকেন্ড

ইসরায়েলের ট্যাংকের দিকে ঢিল ছুড়ে মারে।

যাঁরা চাঁদ নিয়ে ভাবেন

আমি সেই কবিদের মতো হতে চাই;

ফিলিস্তিনিরা জেলের কুঠুরি থেকে চাঁদ দেখতে পারে না।

চাঁদ কী যে সুন্দর!

ফুল কী যে সুন্দর!

মন বিষণ্ন হলে আমি মরা বাবার জন্য ফুল কুড়াই।

তিনি সারা দিন আলজাজিরা দ্যাখেন।

মন চায়, জেসিকা যেন ‘শুভ রমজান’ বলে টেক্সট না পাঠায়।

আমি জানি, আমি আমেরিকান। কারণ যখন আমি কোনো রুমে ঢুকি

সেখানে মৃত্যু হানা দেয়।

যে কবিরা মনে করেন, প্রেতাত্মারা শব্দ নিয়ে মাথা ঘামায়

মৃত্যুর রূপক তাঁদের জন্যই দরকার।

মারা যাওয়ার সময় আমি প্রতিজ্ঞা করি, চিরদিন হানা দেব তোমাদের জীবনে।

একদিন আমিও ফুল নিয়ে লিখব। এমনভাবে লিখব, যেন ফুলগুলো আমাদেরই।

(নূর হিন্দি ফিলিস্তিনি-আমেরিকান কবি)

♣♣♣

আমার জন্য বড় পাওয়া

তার বুকে শুয়ে মরে যাওয়া,

তার বুকে দাফন হলে

তার মাটিতে গলে নিঃশেষ হয়ে

তারপর ফুল হয়ে গজিয়ে উঠে

আমার দেশের কোনো শিশুর খেলার সাথি হওয়া

আমার জন্য বড় পাওয়া।

 

আমার দেশের বুকের আলিঙ্গনে

মিশে থাকা,

এক মুঠো ধূলির মতো

একটা ঘাসের ডগার মতো

একটা ফুলের মতো

তার নিবিড় সান্নিধ্যে থাকা

আমার জন্য বড় পাওয়া।

(ফাদওয়া তুকান যেমন প্রেম ও নারীত্ব নিয়ে কবিতা লিখেছেন, তেমনি ইসরায়েলের ফিলিস্তিন দখল নিয়েও কবিতা লিখেছেন। দেশের মাটিতে মৃত্যু, পুনর্জন্ম এবং দেশের মাটির ফুল, শিশুর খেলার সাথি হওয়ার মতো আবেগ ধারণ করেন তাঁর এই কবিতায়।)

♣♣♣

আরেকটু সম্মানের মৃত্যু আমাদের প্রাপ্য

আরেকটু সম্মানের মৃত্যু আমাদের প্রাপ্য।

আমাদের শরীর বিকৃত হয়ে গেছে, দুমড়েমুচড়ে গেছে

গুলি আর গোলার টুকরোখচিত হয়েছে।

রেডিও টিভিতে আমাদের নাম

ভুল করে উচ্চারণ করা হচ্ছে।

আমাদের ভবনের গায়ে লাগানো আমাদের ছবিগুলো

রং চটে বিবর্ণ হয়ে গেছে।

আমাদের কবর ফলকের ওপর খোদাই করা লেখাগুলো

দৃষ্টির আড়ালে চলে গেছে; পাখি আর সরীসৃপেরা ঢেকে ফেলেছে কথাগুলো।

আমাদের কবরের ওপর ছায়া দেওয়া গাছগুলোতে কেউ

পানি দেয় না।

গনগনে সূর্য আমাদের পচে যাওয়া শরীরকে

আচ্ছন্ন করে ফেলেছে।

 

(কবি ও শিক্ষাবিদ মোসাব আবু তোহা ফিলিস্তিনের সমসাময়িক কালের মেধাবী লেখকদের অন্যতম। ইসরায়েলের গাজা আক্রমণের শিকার হয়ে আবু তোহা ভিটাছাড়া হয়েছেন পরিবার-পরিজনসহ। ইসরায়েলি আক্রমণের মুখে গাজাবাসীর অবস্থার কথা তুলে ধরা হয়েছে এই কবিতায়।) অনুবাদ : দুলাল আল মনসুর

 

উত্তরাধুনিক

Writer, Singer & Environmentalist

তিনটি ফিলিস্তিনি কবিতা

আপডেট সময়: ০৮:৩২:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫

তোমাদের শিল্পের কচকচানি থামাও, আমার লোকেরা মারা যাচ্ছে

উপনিবেশবাদীরা ফুল নিয়ে লেখেন

আমি শিশুদের কথা বলি, শোনো—

তারা ঘাসফুলে পরিণত হওয়ার আগের সেকেন্ড

ইসরায়েলের ট্যাংকের দিকে ঢিল ছুড়ে মারে।

যাঁরা চাঁদ নিয়ে ভাবেন

আমি সেই কবিদের মতো হতে চাই;

ফিলিস্তিনিরা জেলের কুঠুরি থেকে চাঁদ দেখতে পারে না।

চাঁদ কী যে সুন্দর!

ফুল কী যে সুন্দর!

মন বিষণ্ন হলে আমি মরা বাবার জন্য ফুল কুড়াই।

তিনি সারা দিন আলজাজিরা দ্যাখেন।

মন চায়, জেসিকা যেন ‘শুভ রমজান’ বলে টেক্সট না পাঠায়।

আমি জানি, আমি আমেরিকান। কারণ যখন আমি কোনো রুমে ঢুকি

সেখানে মৃত্যু হানা দেয়।

যে কবিরা মনে করেন, প্রেতাত্মারা শব্দ নিয়ে মাথা ঘামায়

মৃত্যুর রূপক তাঁদের জন্যই দরকার।

মারা যাওয়ার সময় আমি প্রতিজ্ঞা করি, চিরদিন হানা দেব তোমাদের জীবনে।

একদিন আমিও ফুল নিয়ে লিখব। এমনভাবে লিখব, যেন ফুলগুলো আমাদেরই।

(নূর হিন্দি ফিলিস্তিনি-আমেরিকান কবি)

♣♣♣

আমার জন্য বড় পাওয়া

তার বুকে শুয়ে মরে যাওয়া,

তার বুকে দাফন হলে

তার মাটিতে গলে নিঃশেষ হয়ে

তারপর ফুল হয়ে গজিয়ে উঠে

আমার দেশের কোনো শিশুর খেলার সাথি হওয়া

আমার জন্য বড় পাওয়া।

 

আমার দেশের বুকের আলিঙ্গনে

মিশে থাকা,

এক মুঠো ধূলির মতো

একটা ঘাসের ডগার মতো

একটা ফুলের মতো

তার নিবিড় সান্নিধ্যে থাকা

আমার জন্য বড় পাওয়া।

(ফাদওয়া তুকান যেমন প্রেম ও নারীত্ব নিয়ে কবিতা লিখেছেন, তেমনি ইসরায়েলের ফিলিস্তিন দখল নিয়েও কবিতা লিখেছেন। দেশের মাটিতে মৃত্যু, পুনর্জন্ম এবং দেশের মাটির ফুল, শিশুর খেলার সাথি হওয়ার মতো আবেগ ধারণ করেন তাঁর এই কবিতায়।)

♣♣♣

আরেকটু সম্মানের মৃত্যু আমাদের প্রাপ্য

আরেকটু সম্মানের মৃত্যু আমাদের প্রাপ্য।

আমাদের শরীর বিকৃত হয়ে গেছে, দুমড়েমুচড়ে গেছে

গুলি আর গোলার টুকরোখচিত হয়েছে।

রেডিও টিভিতে আমাদের নাম

ভুল করে উচ্চারণ করা হচ্ছে।

আমাদের ভবনের গায়ে লাগানো আমাদের ছবিগুলো

রং চটে বিবর্ণ হয়ে গেছে।

আমাদের কবর ফলকের ওপর খোদাই করা লেখাগুলো

দৃষ্টির আড়ালে চলে গেছে; পাখি আর সরীসৃপেরা ঢেকে ফেলেছে কথাগুলো।

আমাদের কবরের ওপর ছায়া দেওয়া গাছগুলোতে কেউ

পানি দেয় না।

গনগনে সূর্য আমাদের পচে যাওয়া শরীরকে

আচ্ছন্ন করে ফেলেছে।

 

(কবি ও শিক্ষাবিদ মোসাব আবু তোহা ফিলিস্তিনের সমসাময়িক কালের মেধাবী লেখকদের অন্যতম। ইসরায়েলের গাজা আক্রমণের শিকার হয়ে আবু তোহা ভিটাছাড়া হয়েছেন পরিবার-পরিজনসহ। ইসরায়েলি আক্রমণের মুখে গাজাবাসীর অবস্থার কথা তুলে ধরা হয়েছে এই কবিতায়।) অনুবাদ : দুলাল আল মনসুর