০২:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

আজ ধরিত্রী দিবস

  • আপডেট সময়: ০৭:২৩:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫
  • 11

উত্তরাধুনিক ডেস্ক: এই বছরের ধরিত্রী দিবসের প্রতিপাদ্য হলো “আমাদের শক্তি, আমাদের গ্রহ”। এই প্রতিপাদ্য মানুষকে নবায়নযোগ্য শক্তিকে একত্রিত হতে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী পরিচ্ছন্ন বিদ্যুতের উৎপাদন তিনগুণ বৃদ্ধি করতে উৎসাহিত করার একটি প্রয়াস।

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলছে, তাতে সমুদ্রপৃষ্ঠ স্ফীত হয়ে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ক্ষতির শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। উষ্ণতা বৃদ্ধি মানবসৃষ্ট, প্রাকৃতিক কারসাজি নয়–এটি বিশ্বে আজ প্রতিষ্ঠিত সত্য। আর এই অমোঘ সত্যটাকে বহুবছর যাবত ধামাচাপা দেয়ার প্রচেষ্টায় রত ছিল বিশ্বের শিল্পোন্নত কতিপয় দেশ। শিল্পবিপ্লবের পর থেকেই পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। উন্নত ও শিল্পায়িত বিশ্বের  লাগামহীন কার্বন নিঃসরণের শিকার এখন গোটা বিশ্ব; কেননা উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়ে বরফ গলছে আর তা স্ফীত করে তুলছে সাগর-মহাসাগরকে যার কুফলে অধিক ভুগবে বিশ্বের দ্বীপরাষ্ট্রসহ নিম্নাঞ্চলীয় নাজুক ভৌগোলিক অবস্থানের দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশ।

সমালোচকরা মনে করেন, ১৯৭০ সাল থেকে পালিত হয়ে আসা ধরিত্রী দিবসের বিভিন্ন অর্জন প্রাণ-প্রকৃতির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার অগ্রগতি সম্পর্কে মানুষকে ভুল ধারণা দিয়ে আসছে।

তাদের মতে, মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ছে, নানা প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এমন কোনো পদক্ষেপ আজ পর্যন্ত নিতে দেখা যায়নি যা আক্ষরিক অর্থেই এসব কর্মকাণ্ড বন্ধ করেছে।

সমালোচকদের অভিযোগ, কিছু ব্যক্তি ও কোম্পানি ধরিত্রী দিবসের দিন তাদের ‘অর্জন’ এমনভাবে প্রচার করে, যা মানুষ বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়। পরিবেশের সুরক্ষার জন্য বাস্তবিক অর্থে যে পরিবর্তন দরকার, সেই দায়িত্ব পালন না করে তারা বিভ্রান্তি ছড়ায়।

এসব ব্যক্তি ও কোম্পানি ধরিত্রী দিবসকে বিভ্রান্তি ছড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। তাদের এই কর্মকাণ্ডকে সমালোচকরা ‘গ্রিনওয়াশিং’ তকমা দিয়েছেন।

বিশ্ব পরিবেশ  দিবস, ধরিত্রী দিবস, আর্থ সামিট, ঐতিহাসিক কিয়োটো প্রোটোকল, প্যারিস সম্মেলন ইত্যাদি বহুবিধ চুক্তি এবং সর্বশেষ আজারবাইজানে ২৯তম কপ (জাতিসংঘের কনফারেন্স অব পার্টিজ) প্রভৃতি সম্মলনের ধুয়ো দিয়ে অনেকটা সময় তারা পার করেছে। পরিবেশ সমস্যা তথা জলবায়ু পরিবর্তনসহ আরো অজস্র প্রাতিবেশিক সমস্যা যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। বরং বিশ্ব পরিবেশ সমস্যা এখন স্থানিক মাত্রা ছাড়িয়ে বৈশ্বিক রূপ লাভ করেছে।

এবছরের থিম সম্পর্কেই আসা যাক, যেখানে বাংলাদেশে বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে, অন্য দেশের ওপর নির্ভর করতে হয় বিদ্যুতের জন্য, সেখানে নবায়নযোগ্য পরিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদনের টেকনোলজি কোথায়? আজারবাইজান সম্মেলনকে সফল আখ্যা দিয়েছে উন্নত বিশ্ব ৩০০ বিলিয়ন ডলারের ফান্ড তৈরি করার চুক্তি করে। এই ফান্ড কি যথেষ্ট? চীন,ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র যোগ দেয়নি এই সম্মেলনে। তাহলে সাফল্যটা কোথায়? ৩০০ বিলিয়ন ডলারের ফান্ড-এর কতোটুকু বাংলাদেশ পাবে? আর এই ফান্ডের একটা ভগ্নাংশ পেতে বাংলাদেশকে অনেক জটিল মেকানিজমের ভেতর দিয়ে যেতে হবে। উন্নত বিশ্বের অতিমাত্রায় কার্বন নিঃস্বরণের ফলে পৃথিবী উষ্ণ হয়ে সাগরের বরফ, হিমবাহ গলছে; তাতে স্ফিত হচ্ছে সমুদ্র। ফলশ্রুতিতে ভৌগোলিকভাবে নাজুক বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের অনেকটাই তলিয়ে যাবার হুমকিতে আছে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নানান ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, যার অন্যতম হলো জলাবায়ু উদ্বাস্তুর সৃষ্টি। বিশ্বে বাংলাদেশ পরিচিত লাভ করেছে ‘পোস্টার চাইল্ড’ হিসেবে।

২০২২ সালে সুইডিশ পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গের একটি টুইট এক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক। তিনি সেসময় টুইটারে (বর্তমানে এক্স) বলেছিলেন, “ধরিত্রী দিবস ক্ষমতাবানদের গ্রহের প্রতি ‘ভালোবাসা’ প্রদর্শনের সুযোগ করে দিয়েছে। একদিকে এদিন ক্ষমতাবানরা পৃথিবীর জন্য আবেগে ভেসে যান, অন্যদিকে একই সঙ্গে তারা সর্বোচ্চ গতিতে পৃথিবী ধ্বংসের আয়োজন অব্যাহত রাখেন।”

এ বিষয়ে আর্থডে ডট অর্গের প্রেসিডেন্ট ও ধরিত্রী দিবসের আয়োজক ক্যাথলিন রজার্স বলেছিলেন, “আমরা সবাই জানি, গ্রিনওয়াশিং চলছে। কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধরিত্রী দিবসকে তাদের মতো করে ব্যবহার করছে।”

 

উত্তরাধুনিক

Writer, Singer & Environmentalist

আজ ধরিত্রী দিবস

আপডেট সময়: ০৭:২৩:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫

উত্তরাধুনিক ডেস্ক: এই বছরের ধরিত্রী দিবসের প্রতিপাদ্য হলো “আমাদের শক্তি, আমাদের গ্রহ”। এই প্রতিপাদ্য মানুষকে নবায়নযোগ্য শক্তিকে একত্রিত হতে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী পরিচ্ছন্ন বিদ্যুতের উৎপাদন তিনগুণ বৃদ্ধি করতে উৎসাহিত করার একটি প্রয়াস।

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলছে, তাতে সমুদ্রপৃষ্ঠ স্ফীত হয়ে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ক্ষতির শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। উষ্ণতা বৃদ্ধি মানবসৃষ্ট, প্রাকৃতিক কারসাজি নয়–এটি বিশ্বে আজ প্রতিষ্ঠিত সত্য। আর এই অমোঘ সত্যটাকে বহুবছর যাবত ধামাচাপা দেয়ার প্রচেষ্টায় রত ছিল বিশ্বের শিল্পোন্নত কতিপয় দেশ। শিল্পবিপ্লবের পর থেকেই পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। উন্নত ও শিল্পায়িত বিশ্বের  লাগামহীন কার্বন নিঃসরণের শিকার এখন গোটা বিশ্ব; কেননা উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়ে বরফ গলছে আর তা স্ফীত করে তুলছে সাগর-মহাসাগরকে যার কুফলে অধিক ভুগবে বিশ্বের দ্বীপরাষ্ট্রসহ নিম্নাঞ্চলীয় নাজুক ভৌগোলিক অবস্থানের দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশ।

সমালোচকরা মনে করেন, ১৯৭০ সাল থেকে পালিত হয়ে আসা ধরিত্রী দিবসের বিভিন্ন অর্জন প্রাণ-প্রকৃতির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার অগ্রগতি সম্পর্কে মানুষকে ভুল ধারণা দিয়ে আসছে।

তাদের মতে, মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ছে, নানা প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এমন কোনো পদক্ষেপ আজ পর্যন্ত নিতে দেখা যায়নি যা আক্ষরিক অর্থেই এসব কর্মকাণ্ড বন্ধ করেছে।

সমালোচকদের অভিযোগ, কিছু ব্যক্তি ও কোম্পানি ধরিত্রী দিবসের দিন তাদের ‘অর্জন’ এমনভাবে প্রচার করে, যা মানুষ বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়। পরিবেশের সুরক্ষার জন্য বাস্তবিক অর্থে যে পরিবর্তন দরকার, সেই দায়িত্ব পালন না করে তারা বিভ্রান্তি ছড়ায়।

এসব ব্যক্তি ও কোম্পানি ধরিত্রী দিবসকে বিভ্রান্তি ছড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। তাদের এই কর্মকাণ্ডকে সমালোচকরা ‘গ্রিনওয়াশিং’ তকমা দিয়েছেন।

বিশ্ব পরিবেশ  দিবস, ধরিত্রী দিবস, আর্থ সামিট, ঐতিহাসিক কিয়োটো প্রোটোকল, প্যারিস সম্মেলন ইত্যাদি বহুবিধ চুক্তি এবং সর্বশেষ আজারবাইজানে ২৯তম কপ (জাতিসংঘের কনফারেন্স অব পার্টিজ) প্রভৃতি সম্মলনের ধুয়ো দিয়ে অনেকটা সময় তারা পার করেছে। পরিবেশ সমস্যা তথা জলবায়ু পরিবর্তনসহ আরো অজস্র প্রাতিবেশিক সমস্যা যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। বরং বিশ্ব পরিবেশ সমস্যা এখন স্থানিক মাত্রা ছাড়িয়ে বৈশ্বিক রূপ লাভ করেছে।

এবছরের থিম সম্পর্কেই আসা যাক, যেখানে বাংলাদেশে বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে, অন্য দেশের ওপর নির্ভর করতে হয় বিদ্যুতের জন্য, সেখানে নবায়নযোগ্য পরিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদনের টেকনোলজি কোথায়? আজারবাইজান সম্মেলনকে সফল আখ্যা দিয়েছে উন্নত বিশ্ব ৩০০ বিলিয়ন ডলারের ফান্ড তৈরি করার চুক্তি করে। এই ফান্ড কি যথেষ্ট? চীন,ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র যোগ দেয়নি এই সম্মেলনে। তাহলে সাফল্যটা কোথায়? ৩০০ বিলিয়ন ডলারের ফান্ড-এর কতোটুকু বাংলাদেশ পাবে? আর এই ফান্ডের একটা ভগ্নাংশ পেতে বাংলাদেশকে অনেক জটিল মেকানিজমের ভেতর দিয়ে যেতে হবে। উন্নত বিশ্বের অতিমাত্রায় কার্বন নিঃস্বরণের ফলে পৃথিবী উষ্ণ হয়ে সাগরের বরফ, হিমবাহ গলছে; তাতে স্ফিত হচ্ছে সমুদ্র। ফলশ্রুতিতে ভৌগোলিকভাবে নাজুক বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের অনেকটাই তলিয়ে যাবার হুমকিতে আছে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নানান ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, যার অন্যতম হলো জলাবায়ু উদ্বাস্তুর সৃষ্টি। বিশ্বে বাংলাদেশ পরিচিত লাভ করেছে ‘পোস্টার চাইল্ড’ হিসেবে।

২০২২ সালে সুইডিশ পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গের একটি টুইট এক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক। তিনি সেসময় টুইটারে (বর্তমানে এক্স) বলেছিলেন, “ধরিত্রী দিবস ক্ষমতাবানদের গ্রহের প্রতি ‘ভালোবাসা’ প্রদর্শনের সুযোগ করে দিয়েছে। একদিকে এদিন ক্ষমতাবানরা পৃথিবীর জন্য আবেগে ভেসে যান, অন্যদিকে একই সঙ্গে তারা সর্বোচ্চ গতিতে পৃথিবী ধ্বংসের আয়োজন অব্যাহত রাখেন।”

এ বিষয়ে আর্থডে ডট অর্গের প্রেসিডেন্ট ও ধরিত্রী দিবসের আয়োজক ক্যাথলিন রজার্স বলেছিলেন, “আমরা সবাই জানি, গ্রিনওয়াশিং চলছে। কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধরিত্রী দিবসকে তাদের মতো করে ব্যবহার করছে।”