০৩:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

মিরসরাইয়ে ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ইছামতির মেলা, দর্শনার্থীর ভিড়

  • আপডেট সময়: ০৭:১৬:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
  • 9

এ যেন হাজার ভক্তের মিলনমেলা একটি মন্দিরকে ঘিরে। ইছামতী মন্দিরকে ঘিরে যে মেলা বসে তারও রয়েছে প্রায় ২০০ বছরের ইতিহাস। প্রতিবছর বৈশাখ মাসের ৬ তারিখ দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন ভক্তরা। রোববার (২০ এপ্রিল) মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে ২০০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী ‘ইছামতির মেলা’ প্রাঙ্গণ হাজারও মানুষের মিলনমেলায় মুখরিত হয়ে উঠে।

জানা গেছে, বাংলা ৬ বৈশাখে প্রতি বছর ইছামতি দেবী (গঙ্গা দেবী) মন্দিরের পূণ্যভূমিকে ঘিরে বসে এই মেলা। প্রাচীনকালের এই পূজা আর মেলাকে ঘিরে এখন আর শুধু ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, এক সর্বজনীন সাংস্কৃতিক উৎসবে রূপ নিয়েছে।

মেলা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে শতাধিক দোকানি নানা রকমের পণ্য নিয়ে হাজির হন প্রত্যেক বছর। মাটির তৈরি নানান খেলনা ও শিল্পকর্ম, বাঁশ, বেত, কাঠ, শঙ্খ, লোহা এবং গ্রামীণ হস্তশিল্পের বাহারী পণ্য যেন ফিরে নিয়ে যায় লোকজ ঐতিহ্যের অতীত দিনে। মেলায় নানা দোকানে শিশুদের জন্য খেলনা, ঘরোয়া প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র এবং গ্রামীণ খাদ্যের পসরা ছিল জমজমাট।

স্থানীয় কানু চন্দ্র পালের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই মেলাকে ঘিরে শুরু থেকেই চলে নানা আয়োজন। ভোর থেকেই শুরু হয় পূজা অর্চনা। মেলার দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে বিকিকিনি, আর মেলা প্রাঙ্গণে বাজতে থাকে নানা বাদ্যযন্ত্রের মধুর সুর।


আরো পড়ুন

কুষ্টিয়ায় মাজারে মাদকবিরোধী অভিযান, ভক্তদের হাতে লাঞ্ছিত ম্যাজিস্ট্রেট


তিনি আরও বলেন, ইছামতি দেবীর পূজাকে কেন্দ্র করে এই মেলা শুরু হলেও সময়ের পরিক্রমায় সব ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণে এটি পেয়েছে সার্বজনীনতার ছোঁয়া। মেলার পরদিন চতুষ্প্রহরব্যাপী নামসংকীর্ত্তনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের ইছামতির উৎসব।

মেলায় আসা মৃৎশিল্পী হরি চন্দ্রপাল বলেন, প্রতি বছর ইছামতির মেলায় মাটির তৈরি খেলনা ও শো-পিস বিক্রি করি। এখানকার ক্রেতাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাই। এই মেলা আমাদের গ্রামীণ শিল্পের এক গুরুত্বপূর্ণ বাজার।

মেলায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থী পপি রানী দে ও অপর্ণা নাথ বলেন, বৈশাখ মানেই বাঙালির প্রাণের উৎসব। ইছামতির মেলা আমাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দেয়।

এক স্কুল শিক্ষক হৃদয় রঞ্জন দে বলেন, বৈশাখ ও ইছামতির মেলা আমাদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির অপরিহার্য অংশ। এই মেলা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মিলনমেলা, যা বাঙালিয়ানার প্রকৃত পরিচয় বহন করে।

মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি সুমন দত্ত এবং সাধারণ সম্পাদক মিন্টু কুমার পাল জানান, দুইশ বছরের পুরোনো ইছামতির মেলা আমাদের গর্বের স্মারক। একসময় এই মেলায় বলী খেলা, পালাগান ও আসর গানের আয়োজন হতো। বর্তমানে সেসব বন্ধ থাকলেও ভবিষ্যতে বৃহৎ পরিসরে আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও মেলার নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দল ও ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সহযোগিতা করেছে।

 

উত্তরাধুনিক

Writer, Singer & Environmentalist

মিরসরাইয়ে ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ইছামতির মেলা, দর্শনার্থীর ভিড়

আপডেট সময়: ০৭:১৬:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

এ যেন হাজার ভক্তের মিলনমেলা একটি মন্দিরকে ঘিরে। ইছামতী মন্দিরকে ঘিরে যে মেলা বসে তারও রয়েছে প্রায় ২০০ বছরের ইতিহাস। প্রতিবছর বৈশাখ মাসের ৬ তারিখ দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন ভক্তরা। রোববার (২০ এপ্রিল) মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে ২০০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী ‘ইছামতির মেলা’ প্রাঙ্গণ হাজারও মানুষের মিলনমেলায় মুখরিত হয়ে উঠে।

জানা গেছে, বাংলা ৬ বৈশাখে প্রতি বছর ইছামতি দেবী (গঙ্গা দেবী) মন্দিরের পূণ্যভূমিকে ঘিরে বসে এই মেলা। প্রাচীনকালের এই পূজা আর মেলাকে ঘিরে এখন আর শুধু ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, এক সর্বজনীন সাংস্কৃতিক উৎসবে রূপ নিয়েছে।

মেলা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে শতাধিক দোকানি নানা রকমের পণ্য নিয়ে হাজির হন প্রত্যেক বছর। মাটির তৈরি নানান খেলনা ও শিল্পকর্ম, বাঁশ, বেত, কাঠ, শঙ্খ, লোহা এবং গ্রামীণ হস্তশিল্পের বাহারী পণ্য যেন ফিরে নিয়ে যায় লোকজ ঐতিহ্যের অতীত দিনে। মেলায় নানা দোকানে শিশুদের জন্য খেলনা, ঘরোয়া প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র এবং গ্রামীণ খাদ্যের পসরা ছিল জমজমাট।

স্থানীয় কানু চন্দ্র পালের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই মেলাকে ঘিরে শুরু থেকেই চলে নানা আয়োজন। ভোর থেকেই শুরু হয় পূজা অর্চনা। মেলার দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে বিকিকিনি, আর মেলা প্রাঙ্গণে বাজতে থাকে নানা বাদ্যযন্ত্রের মধুর সুর।


আরো পড়ুন

কুষ্টিয়ায় মাজারে মাদকবিরোধী অভিযান, ভক্তদের হাতে লাঞ্ছিত ম্যাজিস্ট্রেট


তিনি আরও বলেন, ইছামতি দেবীর পূজাকে কেন্দ্র করে এই মেলা শুরু হলেও সময়ের পরিক্রমায় সব ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণে এটি পেয়েছে সার্বজনীনতার ছোঁয়া। মেলার পরদিন চতুষ্প্রহরব্যাপী নামসংকীর্ত্তনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের ইছামতির উৎসব।

মেলায় আসা মৃৎশিল্পী হরি চন্দ্রপাল বলেন, প্রতি বছর ইছামতির মেলায় মাটির তৈরি খেলনা ও শো-পিস বিক্রি করি। এখানকার ক্রেতাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাই। এই মেলা আমাদের গ্রামীণ শিল্পের এক গুরুত্বপূর্ণ বাজার।

মেলায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থী পপি রানী দে ও অপর্ণা নাথ বলেন, বৈশাখ মানেই বাঙালির প্রাণের উৎসব। ইছামতির মেলা আমাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দেয়।

এক স্কুল শিক্ষক হৃদয় রঞ্জন দে বলেন, বৈশাখ ও ইছামতির মেলা আমাদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির অপরিহার্য অংশ। এই মেলা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মিলনমেলা, যা বাঙালিয়ানার প্রকৃত পরিচয় বহন করে।

মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি সুমন দত্ত এবং সাধারণ সম্পাদক মিন্টু কুমার পাল জানান, দুইশ বছরের পুরোনো ইছামতির মেলা আমাদের গর্বের স্মারক। একসময় এই মেলায় বলী খেলা, পালাগান ও আসর গানের আয়োজন হতো। বর্তমানে সেসব বন্ধ থাকলেও ভবিষ্যতে বৃহৎ পরিসরে আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও মেলার নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দল ও ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সহযোগিতা করেছে।