০৭:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

পিয়াজের বাজার ঊর্ধ্বমুখী, সবজিতেও অস্থিরতা

  • আপডেট সময়: ০৮:২০:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫
  • 9

রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে আবারো চড়া সবজির বাজার। ১লা বৈশাখের পর থেকেই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে পিয়াজও। তবে কিছুটা স্বস্তি মিলছে ব্রয়লার মুরগির দামে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল। স্থিতিশীল রয়েছে চালের বাজার। শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মিরপুর-১০ কাঁচাবাজার সহ কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

সপ্তাহের ব্যবধানে বেশির ভাগ সবজির দাম ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের ছুটি শেষে এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি সরবরাহ ব্যবস্থা। ফলে বাজারে শাক-সবজির সরবরাহ কম, যা দাম বাড়ার অন্যতম কারণ। বৃষ্টির কারণে সবজির সরবরাহও কমে গেছে। এজন্য সবজির দাম একটু বেশি।

পিয়াজের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে পিয়াজের সরবরাহ আগের মতো নেই। চাষিরা পিয়াজ ঘরে তুলে রাখছে, কিছু বিক্রি করছে। ফলে পিয়াজের দাম একটু বেড়েছে। এবার মৌসুমে বেশ কম দর ছিল পিয়াজের। ফলন ভালো হওয়ায় দেশি পিয়াজের কেজি সর্বনিম্ন ৩০ টাকায় নেমেছিল। ঈদের পর ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে এখন দর উঠেছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকায়।

স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে যাত্রাবাড়ী এলাকায় একটি বাসায় ভাড়া থাকেন শাওন আহমেদ। তিনি বলেন, চালের দাম ৯০ টাকার চেয়ে পোলাওয়ের চালই খাওয়া ভালো। কারণ পোলাওয়ের চাল বাজারে ১০০ টাকায় পাওয়া যায়। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পিয়াজের দাম বাড়াচ্ছে। এদের লাগাম এখনই টেনে ধরতে হবে। না হলে পিয়াজের দাম সেঞ্চুরি হাঁকাবে। সরকারকে আহ্বান জানাই সিন্ডিকেট যেন ভেঙে দেয়।

কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি পিয়াজ খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, এক পাল্লা অর্থাৎ ৫ কেজি ২৭০ টাকা। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৭০ টাকা, শিম ৫০ টাকা, টমেটো ৩০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, গোল বেগুন ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি পেঁপে ৫০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, শসা ৫০ টাকা, কহি ৬০ টাকা, পটোল ৪০ টাকা, শজনে ডাঁটা ১০০ থেকে ১২০ টাকা ও ধনেপাতা ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়াও বাজারে প্রতি পিস চালকুমড়া ৫০ টাকা ও লাউয়ের জন্য গুনতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা।

রায়েরবাগ এলাকার বাসিন্দা তারেক হোসেন বলেন, সরকারের বাজার মনিটরিং ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করা উচিত। আমাদের মধ্যবিত্তদের শুধু একটাই চাওয়া- দ্রব্যমূল্য যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, আটাইশ ৬০ থেকে ৬২ টাকা ও নাজিরশাইল ৭৬ থেকে ৮৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি পোলাওয়ের চাল বিক্রি হচ্ছে ১১৬ থেকে ১১৮ টাকায়।

দাম বাড়ানোর পর বাজারে সরবরাহ বেড়েছে সয়াবিন তেলের। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৮৯ টাকা, খোলা সয়াবিন ১৬৯ টাকা ও পাম তেল ১৬৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া, ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৯২২ টাকায়।
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা আনিস বলেন, সরবরাহ কম থাকায় সবজির দাম আগের থেকে কিছুটা বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে অনেক সবজির দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সরবরাহ ঠিক হলে দাম আবার কমে আসবে।

শনির আখড়া বাজারের সবজি বিক্রেতা কাসেম হোসেন বলেন, বাজারে এখন সবজির সরবরাহ কম। মূলত মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে এসব সবজি বাজারে সরবরাহ কম, সে কারণেই দাম বাড়তি যাচ্ছে। শীতের সবজি শেষ হয়ে যাওয়ার পর বাজারে আস্তে আস্তে দাম বাড়তে থাকে। এখন নতুন করে এই মৌসুমের সবজি উঠবে কিছুদিন পর। নতুন সবজি উঠতে শুরু করলে সবজির দাম আবার কিছুটা কমে আসবে।

কারওয়ান বাজারে বাজার করতে আসা নজরুল নয়ন বলেন, আগের চেয়ে সবজির দাম একটু বেশি। এ ছাড়া সবকিছু মোটামুটি নাগালের মধ্যে রয়েছে। ঈদের পরে বাজার মনিটরিং কম দেখছি। এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা চাইলে অনেক কিছু করতে পারে। সরবরাহ কম বলে দাম বেড়েছে এমনটাই বলছেন বিক্রেতারা। পিয়াজের দামটা হঠাৎ করে এমন বেড়ে গেল কেন, এটা নিয়ে একটু সরকারের খোঁজ নেয়া দরকার।

আসিফ ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, যেভাবে চলতেছিল বাজার, তাতে সবকিছু সহনীয় পর্যায়ে ছিল। ঈদের পর মুরগির দাম বেড়েছিল এখন সেটা কমেছে। কিন্তু সবজির দাম ঈদের আগে কম ছিল এখন বেশি। সাপ্লাই নাকি কমে গেছে এমন কথা বিক্রেতারা বলছেন। তবে যাই হোক, সরকারের উচিত রমজানে যেমন বাজার মনিটরিং করা হতো। এই মনিটরিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখার। তাহলে কেউ ইচ্ছে করে দাম বাড়াতে চাইলেও সম্ভব হবে না তখন।

মিরপুর-১০ কাঁচাবাজারে আসছেন সুমি খাতুন। তিনি বলেন, সবজির দাম রমজানেই ভালো ছিল। এখন দিন যাচ্ছে বাড়ছে দাম। আমাদের বেতন তো আর বাড়ে না। বাজার তদারকি যেভাবে ভোক্তা অধিকার করতো ঈদের আগে রমজানে। এখনো এই কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে চলমান রাখা দরকার। বাজার সদাই মানুষের নাগালের মধ্যে থাকলে সবকিছু ঠিক থাকে। বাজার ঠিক না থাকলে কিছুই ঠিক থাকে না। সয়াবিনের দাম বেড়ে যেটা হয়েছে, সেই দামই নিচ্ছে দোকানদাররা।

উত্তরাধুনিক

Writer, Singer & Environmentalist

আল জাজিরাকে প্রধান উপদেষ্টা: শেখ হাসিনাকে চুপ রাখতে বলায় মোদি বললেন পারবেন না

পিয়াজের বাজার ঊর্ধ্বমুখী, সবজিতেও অস্থিরতা

আপডেট সময়: ০৮:২০:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে আবারো চড়া সবজির বাজার। ১লা বৈশাখের পর থেকেই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে পিয়াজও। তবে কিছুটা স্বস্তি মিলছে ব্রয়লার মুরগির দামে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল। স্থিতিশীল রয়েছে চালের বাজার। শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মিরপুর-১০ কাঁচাবাজার সহ কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

সপ্তাহের ব্যবধানে বেশির ভাগ সবজির দাম ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের ছুটি শেষে এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি সরবরাহ ব্যবস্থা। ফলে বাজারে শাক-সবজির সরবরাহ কম, যা দাম বাড়ার অন্যতম কারণ। বৃষ্টির কারণে সবজির সরবরাহও কমে গেছে। এজন্য সবজির দাম একটু বেশি।

পিয়াজের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে পিয়াজের সরবরাহ আগের মতো নেই। চাষিরা পিয়াজ ঘরে তুলে রাখছে, কিছু বিক্রি করছে। ফলে পিয়াজের দাম একটু বেড়েছে। এবার মৌসুমে বেশ কম দর ছিল পিয়াজের। ফলন ভালো হওয়ায় দেশি পিয়াজের কেজি সর্বনিম্ন ৩০ টাকায় নেমেছিল। ঈদের পর ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে এখন দর উঠেছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকায়।

স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে যাত্রাবাড়ী এলাকায় একটি বাসায় ভাড়া থাকেন শাওন আহমেদ। তিনি বলেন, চালের দাম ৯০ টাকার চেয়ে পোলাওয়ের চালই খাওয়া ভালো। কারণ পোলাওয়ের চাল বাজারে ১০০ টাকায় পাওয়া যায়। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পিয়াজের দাম বাড়াচ্ছে। এদের লাগাম এখনই টেনে ধরতে হবে। না হলে পিয়াজের দাম সেঞ্চুরি হাঁকাবে। সরকারকে আহ্বান জানাই সিন্ডিকেট যেন ভেঙে দেয়।

কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি পিয়াজ খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, এক পাল্লা অর্থাৎ ৫ কেজি ২৭০ টাকা। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৭০ টাকা, শিম ৫০ টাকা, টমেটো ৩০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, গোল বেগুন ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি পেঁপে ৫০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, শসা ৫০ টাকা, কহি ৬০ টাকা, পটোল ৪০ টাকা, শজনে ডাঁটা ১০০ থেকে ১২০ টাকা ও ধনেপাতা ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়াও বাজারে প্রতি পিস চালকুমড়া ৫০ টাকা ও লাউয়ের জন্য গুনতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা।

রায়েরবাগ এলাকার বাসিন্দা তারেক হোসেন বলেন, সরকারের বাজার মনিটরিং ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করা উচিত। আমাদের মধ্যবিত্তদের শুধু একটাই চাওয়া- দ্রব্যমূল্য যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, আটাইশ ৬০ থেকে ৬২ টাকা ও নাজিরশাইল ৭৬ থেকে ৮৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি পোলাওয়ের চাল বিক্রি হচ্ছে ১১৬ থেকে ১১৮ টাকায়।

দাম বাড়ানোর পর বাজারে সরবরাহ বেড়েছে সয়াবিন তেলের। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৮৯ টাকা, খোলা সয়াবিন ১৬৯ টাকা ও পাম তেল ১৬৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া, ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৯২২ টাকায়।
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা আনিস বলেন, সরবরাহ কম থাকায় সবজির দাম আগের থেকে কিছুটা বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে অনেক সবজির দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সরবরাহ ঠিক হলে দাম আবার কমে আসবে।

শনির আখড়া বাজারের সবজি বিক্রেতা কাসেম হোসেন বলেন, বাজারে এখন সবজির সরবরাহ কম। মূলত মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে এসব সবজি বাজারে সরবরাহ কম, সে কারণেই দাম বাড়তি যাচ্ছে। শীতের সবজি শেষ হয়ে যাওয়ার পর বাজারে আস্তে আস্তে দাম বাড়তে থাকে। এখন নতুন করে এই মৌসুমের সবজি উঠবে কিছুদিন পর। নতুন সবজি উঠতে শুরু করলে সবজির দাম আবার কিছুটা কমে আসবে।

কারওয়ান বাজারে বাজার করতে আসা নজরুল নয়ন বলেন, আগের চেয়ে সবজির দাম একটু বেশি। এ ছাড়া সবকিছু মোটামুটি নাগালের মধ্যে রয়েছে। ঈদের পরে বাজার মনিটরিং কম দেখছি। এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা চাইলে অনেক কিছু করতে পারে। সরবরাহ কম বলে দাম বেড়েছে এমনটাই বলছেন বিক্রেতারা। পিয়াজের দামটা হঠাৎ করে এমন বেড়ে গেল কেন, এটা নিয়ে একটু সরকারের খোঁজ নেয়া দরকার।

আসিফ ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, যেভাবে চলতেছিল বাজার, তাতে সবকিছু সহনীয় পর্যায়ে ছিল। ঈদের পর মুরগির দাম বেড়েছিল এখন সেটা কমেছে। কিন্তু সবজির দাম ঈদের আগে কম ছিল এখন বেশি। সাপ্লাই নাকি কমে গেছে এমন কথা বিক্রেতারা বলছেন। তবে যাই হোক, সরকারের উচিত রমজানে যেমন বাজার মনিটরিং করা হতো। এই মনিটরিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখার। তাহলে কেউ ইচ্ছে করে দাম বাড়াতে চাইলেও সম্ভব হবে না তখন।

মিরপুর-১০ কাঁচাবাজারে আসছেন সুমি খাতুন। তিনি বলেন, সবজির দাম রমজানেই ভালো ছিল। এখন দিন যাচ্ছে বাড়ছে দাম। আমাদের বেতন তো আর বাড়ে না। বাজার তদারকি যেভাবে ভোক্তা অধিকার করতো ঈদের আগে রমজানে। এখনো এই কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে চলমান রাখা দরকার। বাজার সদাই মানুষের নাগালের মধ্যে থাকলে সবকিছু ঠিক থাকে। বাজার ঠিক না থাকলে কিছুই ঠিক থাকে না। সয়াবিনের দাম বেড়ে যেটা হয়েছে, সেই দামই নিচ্ছে দোকানদাররা।