
আট ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত
আন্দোলনরত পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির মধ্যে ন্যায়সঙ্গত দাবি পূরণের উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগ। বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) এ ব্যাপারে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে বুধবার (১৬ এপ্রিল) রাতেই তেজগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মো. মুস্তাফিজুর রহমান খানকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে অধিদফতরে সংযুক্ত করা হয়েছে। অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উপাধ্যক্ষ শাহেলা পারভীনকে।
বুধবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় আট ঘণ্টা রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সাতরাস্তার মোড় অবরোধ করে রাখে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা। ছয় দফা দাবিতে আগামীকাল তারা রেললাইন অবরোধের ডাক দিয়েছে। এর মধ্যেই সরকারের পক্ষ থেকে দাবি পূরণের আশ্বাস এলো।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম রাতে ঢাকা মেইলকে জানান, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে আমরা অবগত রয়েছি। ছাত্রদের যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত দাবিগুলো পূরণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে দায়িত্বে রদবদল আনা হয়েছে। অচিরেই তাদের অন্যান্য দাবির বিষয়গুলোও দৃশ্যমান হবে।
সচিব বলেন, ছাত্রদের দাবির বিষয়গুলো সরকার সব সময়ই ন্যায্যতা ও যৌক্তিকতার আলোকে বিবেচনা করে। আমরা আশা করি ছাত্ররা কর্মসূচি স্থগিত করে ক্লাসে ফিরবে। তিনি এ বিষয়ে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির মধ্যে রয়েছে—
১. জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ প্রমোশন কোটা বাতিল করতে হবে। জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে। ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
আরো পড়ুন
৬ দফা দাবিতে এবার রেলপথ অবরোধের ঘোষণা পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের
২. ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল করতে হবে। উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু করতে হবে এবং একাডেমিক কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে ইংরেজি মাধ্যমে করতে হবে।
৩. উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রীয়, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৪. কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোয় অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ ও সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
৫. স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা’ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করতে হবে।
৬. পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নত মানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।