
একছুটে… সুমেরু
সুজাতা ঘোষ
যখন পৌঁছলাম মানব সভ্যতার শেষ আলো পেড়িয়ে;
সামনেই শীতল জলতরঙ্গ,
নেচে নেচে আহ্বান করে গেল সাদা সূর্যের দেশে।
সূর্যের আলোর রঙ কি তবে সত্যিই সাদা?
চতুর্দিকে ঢেউ তুলে দাড়িয়ে শুভ্র শীতল শৃঙ্গ!
একি রূপ তোমার পৃথিবী?
দৌড়ব না হাঁটব? নাকি সাঁতার কাটব গলে যাওয়া বরফে!
ইচ্ছা হয় দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরি দুহাতে
ইচ্ছা হয় একছুটে পৌঁছে যাই শৃঙ্গে
ইচ্ছা হয় দুহাত ছড়িয়ে হেঁটে বেড়াই পেঙ্গুইনদের সাথে।
মনে হয় সাদা ভাল্লুকগুলোর সাথে বরফ বল খেলি।
এত রূপ তুমি লুকিয়ে রাখ কি করে, পৃথিবী?
তোমার রঙ মেখে সাদা পরী হতে চাই আমি,
নতোবা সাদা প্রজাপতি।
চিৎকার করে গান করতে চাই একবার,
চিৎকার করে জানাতে চাই,
“ ওগো শুনছ, ভালবাসি আমি তোমায় ”
যা বলতে পারিনি বহু বছরেও।
শেষ বিন্দুতে দাঁড়িয়ে একবার দু’হাত ছড়িয়ে,
শ্বাস নিতে চাই আমি চোখ না খুলে।
হারিয়ে যেতে চাই আমি নীলাকাশে।
ওখান থেকে সূর্য কত দূর?
অথবা ধ্রুবতারা?
তুমি দেখতে আমায় শোওয়ার ঘরের জানলা থেকে!
তুমি তো হারিয়ে ফেলতে চেয়েছিলে আমায়,
আমি ধ্রুবতারার হাত ধরতে পারি ইচ্ছা হলে,
জান কি তুমি?
চাঁদও পাক খেয়ে যায় আমায়, আর হাসে।
চাঁদ কেন হাসে অকারণে?
একদিন রাগ করে জিজ্ঞাসাও করেছিলাম;
হেসে বলেছিল, সুমেরু গলছে, বাড়ি যাও …………।
ও তো আর খবর পড়ে না, কি করে জানবে,
দু’বছরে আরও অনেক বরফ জমেছে পাহাড়ের গায়ে।
এই পাহাড়ের ভিতর অনেক ধনরত্ন ঘুমিয়ে আছে শান্তিতে।
ভাগ্যিস মানুষের হাত পড়েনি!
মানুষ তো কাছেই যেতে পারে না, চাই ভেঙ্গে ঘাড়ে পড়ার ভয়ে।
সত্যিই, সুন্দর যে এত ভয়ঙ্কর হতে পারে, ভাবা যায় না।
আমি তো ভাবছি, কিছুকাল এখানেই কাটিয়ে যাব।
তুমিও চাইলে আসতে পার,
আমরা বরফের ঘর বানাব।
রাগ করলে তো? জানি;
কতবার বলেছি, ল্যাপটপটা সরাও, ফোনটা ছুড়ে ফেল,
ট্যাবটা ফ্ল্যাশ করে দাও।
ড্রাইভারের সিটে শক্ত করে বেল্টটা বেঁধ না,
অতগুলো ওষুধ নিয়ম করে না খেয়ে, একটু জোরে শ্বাস নাও তো!
শুনবে না, আমার কোন কথাই শুনবে না।
তাই তো চলে এলাম এতদূরে, সবকিছু ছেড়ে।
এখানে কত শান্তি, কত আলো!
একা একা ছুটে বেড়াচ্ছি এ পাহাড় থেকে ও পাহাড়।
তুমি যদি হাতটা ধরতে, তাহলে বুঝতে কি আনন্দ!
আমি ছুটছি আর ছুটছি।
কত বরফ গায়ে মাখলাম, হাসতে হাসতে ক্লান্ত।
ক্লান্তিতে আমার দুচোখ বেয়ে জল নামছে।
আমি কি কাঁদছি?
তোমাকে ছাড়া সবকিছুই একঘেয়ে লাগে।
তোমার হাত ধরেই ছুটতে চাই আমি
তোমার কাঁধে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে বসব লেকের ধারে।
তোমার আঙ্গুল ছুঁয়ে হেঁটে যাব ঘাসের উপর দিয়ে
তোমার বুকে নিশ্চিন্তে মাথা রেখে
ঘুড়ব সুমেরু, কুমেরু, চাঁদ, সূর্য, তারা।
চলো যাই একছুটে সুমেরু, তোমার হাত ধরে ।।
♣♣
তোমারও ভাল হোক
দেবযানী ভট্রাচার্য
তুমি চলে গেছ বলে, গাছের পাতারা
হাহাকার করে কেঁদে ওঠেনি একবারও
তুমি চলে গেছ বলে, আকাশে তারাদের কাছে
জানতে চাইনি, কী করেছিলে তোমরা
তুমি চরে গেছ বলে, ক্রোধের আগুনে
জ্বলে ওঠেনি আমার তৃতীয় চোখ
সবকিছুর জন্য মনের ভেতরে চাই তোমার উপস্থিতি
মনের পরতে পরতে শুধুই পাথর, তুমি নেই
পাথরে খাঁজে জমে আছে প্রেম, তুমি নেই
সকলের পাশাপাশি তোমারও ভালো হোক।