
প্রতিবেদক: মেঘনা নদীর দূষণ বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। সূত্রমতে, প্রতিদিন অন্তত ৫০টি পয়েন্ট দিয়ে ড্রেনের মাধ্যমে ভৈরব বাজারের ময়লা-আর্বজনা ও বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদীটিতে। হাওর জনপদের পাঁচ জেলার অন্তত ২০টি উপজেলার শতশত নৌকা প্রতিদিন মালামাল নিতে ভৈরবে যায়। সচেতনতার অভাবে এসব নৌকাও নদীর যত্রতত্র পলিথিন ও ময়লা-আবর্জনা ফেলে যাচ্ছে।
এছাড়া ময়লার স্তূপ জমে নদীর পার পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। তীব্র দুর্গন্ধের কারণে এসব স্থানে চলাফেরা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। এমনকি ভ্রাম্যমাণ আদালতের জব্দ করা বিভিন্ন মালামালও মেঘনায় ফেলা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
যে নদীকে ঘিরে ভৈরব বন্দর গড়ে উঠেছে, সেই নদীরই আজ নাভিশ্বাস উঠেছে।
ময়লা-আবর্জনা ও লক্ষকোটি পলিথিন নিক্ষেপ, অবৈধ দখলদারিত্ব, মানববর্জ্য আর বহু যুগ ধরে হাজারীবাগ ট্যানারির বিষাক্ত ক্রোমিয়াম বুড়িগঙ্গা নদীকে আজ মৃত নদীতে পরিণত করেছে। তেমনিভাবে মেঘনাও নানা দূষণের শিকার।
ভৈরব ক্রমবর্ধমান একটি শহর। বাড়ছে ব্যবসা-বাণিজ্য, বাড়ছে দোকান ও আড়তের সংখ্যা। গড়ে উঠেছে কিশোরগঞ্জ জেলার বৃহত্তম জুতা তৈরির কারখানা ও দোকান। এসব আয়োজনের লক্ষ্যই বুঝি মেঘনাকে প্রবল দূষণের প্রান্তসীমায় নিয়ে যাওয়া। কেননা, এসব শিল্প-কলকারখানা অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র গড়ে উঠছে। দূষণের দায় সবার। এই দায় কেউ বহন করছেন না; কিন্তু দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে চলছেন। এটা বুমেরাং হয়ে তাদের স্কন্ধে আঘাত করবে, সেটা এখনই ভেবে নেয়া উচিৎ।
ভৈরব বন্দর ও শহর এবং মেঘনা নদী-এই দু’টি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। একটি দূষিত হলে অন্যটিও দূষিত হয়ে উঠতে পারে। মেঘনা নদীর দূষণ কমাতে বা আরও যেন দূষিত না হয়, সেই বিষয়ে প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে জনসচেতনতা সৃষ্টি। এর দুষণ কমাতে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর, ও প্রশাসনকে এখনই তৎপর হতে হবে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ভৈরবের ব্যবসায়ী, গণ্যমান্য ব্যক্তি, সাধারণ মানুষ জনসচেতনতার কাজটি চালিয়ে গেলে দূষণ অনেকাংশেই কমে যাবে। আর বিবিধ নৌযানের মালিককে সচেতন করার উদ্যোগ নিতে হবে কালবিলম্ব না করে।
এ নদী একসময় এ অঞ্চলের মানুষের জন্য আশীর্বাদ ছিল। কিন্তু ক্রমাগত ময়লা-আবর্জনা ও বর্জ্য ফেলার কারণে নদীর পানি ভয়াবহ রকমের দূষিত হয়ে পড়েছে। ফলে এই পানি এখন ব্যবহারের অযোগ্য। দূষিত পানির প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর।
এখানকার পানি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ধ্বংসের মুখে চলে গেছে মৎস্য সম্পদও। আগের মতো আর মাছ মিলছে না নদীতে। আবর্জনা জমার কারণে কমে যাচ্ছে নদীর ঢেউও। নদীর ওপর নির্ভরশীল এই অঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠী, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও পরিবেশ বিপন্ন।
এই বিপন্নতা কাটিয়ে উঠতে এখনই সময় সমন্বিত উদ্যোগের। তা না হলে অচিরেই মেঘনা নদীও পরিণত হবে বুড়িগঙ্গার মতো মৃত নদীতে।
আসুন, আমরা যার যার অবস্থান থেকে এই নদী রক্ষায় দায়িত্ব পালন করি। অন্যকে সচেতন করি ইতিহাসের সাক্ষী এই নদীকে বাঁচাতে।