
- অর্চি অতন্দ্রিলা
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের এবং অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের ছয় মাসে নানা সংকট আর জটিলতা সামনে এসেছে। সরকারের ‘হানিমুন পিরিয়ড’ শেষ উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ বলেছে, শুরুর সময়ের তুলনায় সরকার সমর্থন হারাচ্ছে।
বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের ওপর চাপও বাড়ছে।
“এই সরকার জনসম্পৃক্তহীন অবস্থায় আছে,” বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জোবাইদা নাসরীন।
তিন মাস আগেও সরকারকে দশের মধ্যে ছয় রেটিং দেয়ার কথা উল্লেখ করেছিলেন মিজ জোবাইদা, এখন সেটা চার হবে বলে মনে করছেন তিনি।
১. নির্বাচন

২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করার কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সেই সময় ধরেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
তবে পরিষ্কার রোডম্যাপ না থাকার প্রশ্ন তুলেছে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি। দ্রুত নির্বাচন দেয়ার জন্য লাগাতার বলে যাচ্ছে দলটি। এমনকি নির্বাচন এই বছরের মাঝামাঝি জুলাই-অগাস্টের মধ্যে সম্ভব, এমনটাও বলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বড় রাজনৈতিক দলের এমন চাপ সরকারকে কিছুটা হলেও বেকায়দায় ফেলে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. সাব্বির আহমেদ।
ছবির উৎস,Reuters
তবে একই সাথে নির্বাচন ঘিরে আরও যে একটি প্রসঙ্গ রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে সেটা নির্বাচনের সময় সরকারের নিরপেক্ষতা। সরকারের সাথে যুক্ত থাকা অবস্থায় ছাত্রদের রাজনৈতিক দল গঠনের প্রেক্ষাপটে এমন প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
ফেব্রুয়ারি মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের কড়া সমালোচনা করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাও এক অনুষ্ঠানে বলেন, “এই গভর্নমেন্ট নিরপেক্ষতা তো হারিয়েছে। আজকে বহু লোক পাবেন যারা বলবে এ অভ্যুত্থানের যে লক্ষ্য ছিল সেটা ব্যর্থ হয়ে গেছে।”
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, গণ অধিকার পরিষদের মতো দলের নেতারাও সরকারের সমালোচনা করছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের রাজনৈতিক ম্যান্ডেট নিয়েও অনেক ক্ষেত্রে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা পূর্ববর্তী নির্বাচনগুলো থেকে নির্ভরযোগ্য ও জবাবদিহিতামূলক করার চ্যালেঞ্জ যেমন আছে, তেমন নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কীভাবে কার্যকর উপায়ে হবে, আছে সেই প্রশ্নও।
এসব মিলে সরকারের জন্য গ্রহণযোগ্যতা ধরে রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠান হবে একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
২. রাজনৈতিক অবিশ্বাস

ছয় মাসের সময়কালেই নানা ধরনের রাজনৈতিক বিভাজন, দ্বন্দ্ব আর অবিশ্বাসের জায়গা দেখা যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঘিরে। ‘কিংস পার্টি’ বিতর্কে সরকারের ছাত্র উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ দুজনেই বলেছেন, রাজনীতি করলে তারা সরকারি পদ থেকে বের হয়ে যাবেন।
কিন্তু তাতে করে বিএনপি থেমে যায়নি। দলটির শীর্ষ পর্যায় থেকে ক্রমাগত বলা হচ্ছে নতুন দলকে তারা স্বাগত জানাবেন, কিন্তু সরকারে থেকে দল গঠন হলে সেটা জনগণ মেনে নেবে না।
এর আগেও রাষ্ট্রপতি অপসারণ ও জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র নিয়ে ছাত্রনেতাদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভেদ দেখা গেছে।
সরকারের সমর্থনে দল হলে সেটা বিএনপির জন্য আঘাত তৈরি করে কিনা, কিংবা “এই সরকারটা আবার এক এগারোর মতো আচরণ করে কিনা তাদের সাথে” এমন শঙ্কা থেকেই বিএনপি ছাত্রদের দল নিয়ে বিরোধিতা করছে বলে মনে করেন সাব্বির আহমেদ।
